আউটসোর্সিং কী এবং কীভাবে এটি আপনার আয়ের পথ হতে পারে?

A graphic in Bengali asking, "আউটসোর্সিং কী এবং কীভাবে শিখবেন?" (What is outsourcing and how to learn?). The background is bright yellow, and on the right is a smiling, well-dressed man with curly hair looking up from a silver laptop.

চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত? নাকি নিজের স্কিল দিয়ে ঘরে বসেই ইনকাম করার কথা ভাবছেন? তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের ডিজিটাল যুগে আউটসোর্সিং শব্দটা আমরা প্রায়ই শুনি, কিন্তু অনেকেই এর সঠিক মানে বুঝি না বা বুঝলেও কনফিউশনে থাকি।

বিশেষ করে আমাদের দেশে আউটসোর্সিং আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে এমন একটা গোলমেল আছে যে মানুষ দুইটাকে একই জিনিস মনে করে বসে থাকে।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিং মার্কেটে একটা শক্তিশালী পজিশন তৈরি করে ফেলেছে। Oxford Internet Institute এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ গ্লোবাল অনলাইন লেবার মার্কেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রোথ রেট অর্জন করেছে। মানে সুযোগ আছে বিশাল!

কিন্তু সমস্যা হলো সঠিক গাইডলাইন আর তথ্যের অভাব। তাই আজকের এই ব্লগে আমি আউটসোর্সিং সম্পর্কে এমনভাবে বলবো যাতে আপনার সব কনফিউশন দূর হয়ে যায় এবং আপনি একটা ক্লিয়ার রোডম্যাপ পেয়ে যান।

আউটসোর্সিং কি?

সহজ ভাষায় আউটসোর্সিং (Outsourcing) হলো একটি বিজনেস প্রসেস। যখন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের অভ্যন্তরীণ কাজ বা প্রজেক্টগুলো নিজেদের কর্মীদের দিয়ে না করিয়ে, অন্য কোনো দেশের বা বাইরের কোনো তৃতীয় পক্ষ (Third-Party) ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করিয়ে নেয়, তখন তাকে আউটসোর্সিং বলে।

ধরুন, একটি স্প্যানিশ সফটওয়্যার কোম্পানি তাদের Customer Support কাজটি ভারতের একটি কল সেন্টার কোম্পানিকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। কিংবা আমেরিকার একটি ছোট অনলাইন শপ তাদের অ্যাকাউন্টিং বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের কাজটি বাংলাদেশের একজন বিশেষজ্ঞের হাতে তুলে দিচ্ছে। এটাই হলো আউটসোর্সিং।

আউটসোর্সিংয়ের মূল ব্যাপারটা হলো কাজটিকে বাইরে (Out) সরিয়ে দেওয়া বা উৎস (Source) খুঁজে নেওয়া। এখানে মনে রাখতে হবে, কাজটি একটি কোম্পানি থেকে অন্য একটি কোম্পানির কাছে যেতে পারে, কিংবা একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছেও যেতে পারে।

তবে একটি বিষয়ে আপনার কৌতুহল জাগতেই পারে, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটা কী? আউটসোর্সিং এর সাথে কি এর কোনো পার্থক্য আছে? অবশ্যই আছে। তবে সেই পার্থক্যটা কী আর কেন আমাদের দেশে এই দুটো শব্দকে প্রায়শই এক মনে করা হয়, সেটা আমরা এই ব্লগের একটু পরেই বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপাতত জেনে রাখুন, আউটসোর্সিং হলো সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয়।

আউটসোর্সিং এর মূল উদ্দেশ্য কী?

কোম্পানিগুলো কেন আউটসোর্সিং করে? এর পেছনে বেশ কিছু স্ট্র্যাটেজিক কারণ আছে। সেই কারণগুলো সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

  • খরচ কমানোঃ আউটসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো এটি। অনেক সময় দেখা যায়, ইউরোপ, আমেরিকায় একজন অভিজ্ঞ কর্মীকে যে বেতন দিতে হয়, অন্য কোনো দেশে (যেমনঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন) সেই একই কাজ অনেক কম খরচে করানো যায়। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো লেবার কস্ট কমানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
  • দক্ষতার অ্যাক্সেসঃ কোম্পানির নিজস্ব কর্মীর মধ্যে হয়তো বিশেষ কোনো বিষয়ে (যেমনঃ অ্যাডভান্সড ডেটা অ্যানালাইসিস বা নতুন কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ) দক্ষতা নেই। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো সেই কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে সেরা কাউকে খুঁজে নিতে পারে।
  • কাজে ফোকাস করাঃ একটি কোম্পানি যখন তাদের মূল ব্যবসায়ের বাইরের কাজগুলো (যেমনঃ পে-রোল প্রসেসিং, আইটি সাপোর্ট) আউটসোর্স করে দেয়, তখন তারা তাদের মূল ব্যবসায়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে। এতে করে ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়।
  • সময় বাঁচানোঃ নতুন কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সেটআপ করতে অনেক সময় লাগে। আউটসোর্সিংয়ে সরাসরি দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে কাজে লাগানো যায়, ফলে কাজটি দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়।

আউটসোর্সিং এর সুবিধা সমূহ

আউটসোর্সিং শুধুমাত্র বায়ার (কাজদাতা) কোম্পানির জন্যই নয়, যারা কাজ করছেন অর্থাৎ আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সার এবং সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্যও অনেক বড় সুযোগ নিয়ে আসে। এর মূল সুবিধাগুলো হলোঃ

  • বিশাল কাজের বাজারঃ আউটসোর্সিংয়ের কারণে কাজের ক্ষেত্রটি আর শুধু আপনার দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।
  • অধিক আয়ের সম্ভাবনাঃ উন্নত দেশের ক্লায়েন্টরা সাধারণত বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারের তুলনায় অনেক বেশি রেট বা বেতন দিয়ে থাকে। আপনার দক্ষতা ভালো হলে প্রতি ঘণ্টায় বা প্রতি প্রজেক্টে ভালো অঙ্কের টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
  • ফ্লেক্সিবল লাইফস্টাইলঃ বেশিরভাগ আউটসোর্সিং কাজই দূর থেকে Remotely করা হয়। এর ফলে আপনি ঘরে বসেই বা আপনার পছন্দের যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন। কাজের সময়ের স্বাধীনতা থাকায় লাইফস্টাইলও ফ্লেক্সিবল হয়।
  • স্কিল ডেভেলপমেন্টঃ বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার ফলে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি যেমন ভারি হয়, তেমনি নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং স্কিল শেখার সুযোগ তৈরি হয়।
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ বিশেষ করে আমাদের মতো জনবহুল দেশে, যেখানে সরকারি বা ট্রাডিশনাল কাজের সুযোগ সীমিত, সেখানে আউটসোর্সিং ঘরে বসে হাজার হাজার মানুষের জন্য সম্মানজনক আয়ের পথ তৈরি করেছে।

আউটসোর্সিং করতে হলে যে বিষয় জানতে হবে

আউটসোর্সিংয়ে সফল হতে হলে শুধু টেকনিক্যাল স্কিল থাকলেই হবে না, আরও কিছু বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে। সেগুলো হচ্ছে-

  • কমিউনিকেশন স্কিলঃ আপনি যতই ভালো কাজ জানেন না কেন, যদি ক্লায়েন্টের সাথে প্রপারলি কমিউনিকেট করতে না পারেন তাহলে সমস্যা হবে। ইংরেজিতে একটা ডিসেন্ট লেভেলের দক্ষতা থাকা মাস্ট।
  • প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট দক্ষতাঃ ডেডলাইন মেইনটেইন করা, টাস্ক প্রায়োরিটাইজ করা, টিমের সাথে কো-অর্ডিনেশন, এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Trello, Asana, Jira এই ধরনের টুলস সম্পর্কে বেসিক আইডিয়া রাখা ভালো।
  • কোয়ালিটি মেইনটেইন করার মানসিকতা থাকতে হবে। দেখবেন অনেকে ফাস্ট ডেলিভারি দিতে গিয়ে কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে ফেলে। এটা বড় ধরনের ভুল। ভালো কাজ একবার করলে ক্লায়েন্ট বারবার আসবে।
  • টাইম ম্যানেজমেন্টঃ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। বিশেষ করে যখন বিভিন্ন টাইম জোনের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করবেন, তখন এটা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মধ্যে পার্থক্য কী?

এইবার আসি সবচেয়ে কনফিউজিং পার্টে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ মনে করে আউটসোর্সিং মানেই ফ্রিল্যান্সিং, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ফ্রিল্যান্সিং হলো ইন্ডিভিজুয়াল বেসিসে কাজ করা। একজন ফ্রিল্যান্সার নিজে একক ভাবে ক্লায়েন্টের কাজ করেন। তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্ট করেন না, নিজের নামেই কাজ করেন। যেমন, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার Fiverr-এ তার সার্ভিস দিচ্ছেন, এটা ফ্রিল্যান্সিং।

অন্যদিকে আউটসোর্সিং হলো Organizational level-এ কাজ করা। এখানে একটা কোম্পানি বা টিম অন্য কোম্পানির কাজ করে। ধরুন, ঢাকার একটা সফটওয়্যার ফার্ম যেখানে ২০ জন ডেভেলপার কাজ করে, তারা আমেরিকার একটা কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপ করছে- এটা আউটসোর্সিং।

আরেকটা পার্থক্য হলো, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ছোট ছোট টাস্ক বেশি থাকে, কিন্তু আউটসোর্সিংয়ে বড় প্রজেক্ট আসে যার জন্য টিম ওয়ার্ক প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি সব রিস্ক নিজে নেন, কিন্তু আউটসোর্সিংয়ে কোম্পানি রিস্ক ম্যানেজ করে।

এক বাক্যে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মধ্যে পার্থক্য হলো- ফ্রিল্যান্সিং হলো অন্যের কাজ করে দেওয়া এবং আউটসোর্সিং হলো অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া।

আরো সহজভাবে বললে, আপনি যখন Upwork বা Fiverr-এ কাজ করেন, তখন আপনি ফ্রিল্যান্সার। আর যে বিদেশি ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজটি দিচ্ছে, তারা সেই কাজটা আউটসোর্স করছে। বাংলাদেশে যখন আমরা বলি “আমি আউটসোর্সিং করি”, তখন আসলে আমরা বোঝাতে চাই “আমি বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করি” বা “আমি বিদেশি ক্লায়েন্টের আউটসোর্স করা কাজ করি।” আশা করি, এবার ধারণাটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেল!

আউটসোর্সিং কীভাবে শিখবেন?

আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং শেখার মূল ব্যাপারটা হলো একটি হাই-ইন-ডিমান্ড (High-in-Demand) স্কিল শেখা। শেখার প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে হওয়া উচিতঃ

১. নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা যাচাই করুন

প্রথমে খুঁজে বের করুন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে এবং কোন কাজে আপনি সহজেই ভালো করতে পারবেন। ধরুন, আপনি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন, তবে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন।

২. স্কিল নির্বাচন

বাজারে যে স্কিলগুলোর চাহিদা বেশি, সেগুলোর মধ্য থেকে আপনার আগ্রহের সাথে মিলিয়ে একটি নির্বাচন করুন। যেমনঃ ডেটা অ্যানালিটিক্স, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাডভান্সড ভিডিও এডিটিং, কন্টেন্ট রাইটিং, SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন)।

৩. অনলাইন লার্নিং

এখন শেখার জন্য সেরা রিসোর্স ইন্টারনেটে সহজেই পাওয়া যায়। ইউটিউবে অসংখ্য ফ্রি টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। এছাড়া এডটেক প্ল্যাটফর্ম যেমনঃ Udemy, Coursera, Skillshare, EdX-এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রিমিয়াম কোর্সগুলো কম খরচে করা যায়। গুগল সার্চ করে যেকোনো বিষয়ে বিস্তারিত লেখা বা ডকুমেন্টেশন খুঁজে নিতে পারেন।

৪. প্র্যাকটিস এবং প্রজেক্ট তৈরি

শুধু ভিডিও দেখে বা ব্লগ পড়ে লাভ নেই। শেখার পাশাপাশি নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে।নিজের জন্য কিংবা বন্ধু-বান্ধবের জন্য ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করুন। এটাই আপনার পোর্টফোলিও হবে।

৫. মেন্টর বা ট্রেনিং সেন্টার

যদি একা শেখা কঠিন মনে হয়, তবে অভিজ্ঞ একজন মেন্টরের বা একটি ভালো ট্রেনিং সেন্টারের সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আমাদের DUSRA Soft-এ যোগাযোগ করতে পারেন।

আউটসোর্সিংয়ে কী কী কাজ করার সুযোগ আছে?

আউটসোর্সিংয়ের কাজের কোনো শেষ নেই। আপনার যদি কোনো বিশেষ দক্ষতা থাকে, তবে সেটাকেও কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের জনপ্রিয় কিছু কাজের ক্ষেত্র হলোঃ

  • ওয়েব ডেভেলপমেন্টঃ ওয়েবসাইট তৈরি (WordPress, Laravel), অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (Android, IOS), সফটওয়্যার টেস্টিং, সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি।
  • ডিজাইন ও ক্রিয়েটিভঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন (Logo, Brochure), UI/UX ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, মোশন গ্রাফিক্স।
  • রাইটিং ও কন্টেন্টঃ আর্টিকেল রাইটিং, কপিরাইটিং, ব্লগিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, ট্রান্সলেশন ইতাদি।
  • ডিজিটাল মার্কেটিংঃ SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি।
  • ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টঃ অ্যাডমিনের কাজ, ইমেইল ম্যানেজমেন্ট, শিডিউলিং, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
  • কাস্টমার সার্ভিস ও সাপোর্টঃ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট, টেলি-সেলস।

আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা কেমন?

চাহিদার কথা বলতে গেলে, এটা দিন দিন বাড়ছেই। কোভিড-পরবর্তী সময়ে রিমোট ওয়ার্ক কালচার বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো এখন আরও বেশি করে আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। তারা বুঝে গেছে যে ফিজিক্যাল অফিস না থাকলেও দক্ষ টিমের সাহায্যে কাজ চালানো সম্ভব।

বাংলাদেশের পজিশন এই মার্কেটে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের দেশের তরুণরা টেকনোলজিতে যথেষ্ট স্কিলড এবং কস্ট-ইফেক্টিভও বটে। ফলে বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি ফার্মগুলোর সাথে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে।

এআই টেকনোলজি আসায় কিছু বেসিক কাজের চাহিদা কমলেও, জটিল ও ক্রিয়েটিভ কাজের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই যারা অ্যাডভান্সড স্কিল নিয়ে কাজ করছেন, তাদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।

আউটসোর্সিং এর জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম

ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার জন্য কিছু জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এগুলো হলো আপনার কাজের বাজারঃ

  • Upwork
  • Fiverr
  • Freelancer.com
  • Guru
  • LinkedIn
  • PeoplePerHour
  • 99Designs

ঢাকার সেরা আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার

অনলাইনে না শিখে কেউ কেউ সরাসরি প্রশিক্ষকের কাছে শিখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ঢাকার কিছু জনপ্রিয় আউটসোর্সিং/ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারের তালিকা দিচ্ছিঃ

  • DUSRA Soft
  • Basis Institute of Technology & Management (BITM)
  • Creative IT Institute
  • CodersTrust Bangladesh
  • PeopleNTech

আউটসোর্সিং করে কি ঘরে বসে আয় করা যায়?

একদম সম্ভব! আসলে আউটসোর্সিং এর পুরো কনসেপ্টটাই রিমোট ওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আপনার শুধু একটা ল্যাপটপ/কম্পিউটার আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই চলবে। বাসা, ক্যাফে, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, যেখান থেকে খুশি কাজ করতে পারবেন।

বাস্তব উদাহরণ দিই, আমার একজন পরিচিত গ্রাফিক ডিজাইনার আছেন যিনি সিলেটে থাকেন। উনি ঘরে বসেই আমেরিকান ক্লায়েন্টদের জন্য ব্র্যান্ডিং ডিজাইন করেন, মাসে আয় করেন লাখ টাকার বেশি। অফিসে যেতে হয় না, ট্রাফিক জ্যামের ঝামেলা নেই, ফ্যামিলির সাথে টাইম স্পেন্ড করতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, ঘরে বসে আয় মানে Easy money না। কনসিস্টেন্ট এফোর্ট, ডেডিকেশন, কোয়ালিটি ওয়ার্ক এসব দিতে হবে। কিন্তু যদি সিরিয়াসলি করেন, তাহলে আউটসোর্সিং ফাইন্যান্সিয়াল ফ্রিডম দিতে পারে।

উপসংহার

আউটসোর্সিংয়ের এই বিশাল পৃথিবীটা আপনার জন্য অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা দেখলাম, আউটসোর্সিং হলো একটি শক্তিশালী বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, আর ফ্রিল্যান্সিং হলো সেই আউটসোর্সড কাজ করার মাধ্যম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পথে সফল হওয়ার জন্য কোনো শর্টকাট নেই।

আপনাকে অন্তত একটি স্কিল খুব ভালোভাবে শিখতে হবে, প্র্যাকটিস করতে হবে এবং নিজেকে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখবেন, ডিজিটাল যুগে দক্ষতা হলো আপনার সবচেয়ে দামি সম্পদ।

FAQs

১. আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং কী?

আউটসোর্সিং হলো প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট কাজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে দক্ষ কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া। আর ফ্রিল্যান্সিং হলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে যেসব কাজ করানো হয় সেগুলো করে দেওয়া।

২. আউটসোর্সিং শেখার উপায় কি?

আউটসোর্সিং শেখার উপায় ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়ে এই ব্লগের উপরের অংশে। শেখানে দেখে নিন কীভাবে শুরু করবেন আউটসোর্সিং শেখার জার্নি।


You may also like

ফেসবুক মার্কেটিং কি - এই প্রশ্নের পাশে একজন পেশাদার ব্যক্তি ল্যাপটপ নিয়ে হাসিমুখে থাম্বস আপ দিচ্ছেন।

ফেসবুক মার্কেটিং কি? কিভাবে করবেন ফেসবুক মার্কেটিং এর A to Z

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে অনলাইন ব্যবসার পরিধি। আর অনলাইন ব্যবসায় প্রসারের...
ডিজিটাল মার্কেটিং A to Z: আপনার সফলতার পূর্ণ গাইড

ডিজিটাল মার্কেটিং কি, কিভাবে শুরু করবেন? এর A to Z

বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব যেন আকাশচুম্বী। গত এক দশকে অনলাইনের বিকাশ, ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসার এবং মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার...
দুটি ব্যক্তি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) সংক্রান্ত কাজ করছেন, একজন ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে বিশ্লেষণ করছেন এবং অন্যজন ডেটা এবং গ্রাফ দেখাচ্ছেন, পটভূমিতে SEO শব্দ এবং চার্ট প্রদর্শিত।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) কি, কেন, কিভাবে? DUSRA Soft

আজকের ডিজিটাল যুগে প্রতিটি ব্যবসার জন্য অনলাইন প্রেজেন্স শুধুমাত্র একটি অপশন না, বরং একটি অপরিহার্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে...

Follow us